আশুলিয়ায় ট্রিপল মার্ডার এর রহস্য উদঘাটন, আটক ২ - ads24bd.com

সর্বশেষ


Tuesday, October 3, 2023

আশুলিয়ায় ট্রিপল মার্ডার এর রহস্য উদঘাটন, আটক ২



নিজস্ব প্রতিনিধি : ঢাকার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার উত্তর গাজিরচট ফকির বাড়ি এলাকা থেকে একটি বহুতল ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্লাট থেকে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার অভিযোগে স্বামী স্ত্রীর সহ দুইজনকে গ্রেফতার করে র‍্যাব -৪।  

গত ৩০ সেপ্টেম্বর  সাভারের আশুলিয়া জামগড়া এলাকায় বহুতল ভবনের ৪র্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ভবনের অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করে। পরবর্তীতে উক্ত ফ্ল্যাট থেকে স্বামী, স্ত্রী ও তাদের ১২ বছরের সন্তানের অর্ধগলিত গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর নং-০৪/৭১৬, তারিখ ০১ অক্টোবর ২০২৩। একই পরিবারের ০৩ জনের হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র‌্যাব উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-০৪ এর একটি আভিযানিক দল এই নৃশংস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে। পরবর্তীতে র‍্যাব গাজীপুরের শফিপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকান্ডের মূল হোতা সাগর আলী (৩১) ও তার স্ত্রী কে গ্রেফতার করে। 

গ্রেফতার কৃত আসামিরা হলো টাঙ্গাইল জেলার  মোবারক  ওরফে মোগবর আলীর ছেলে মোঃ সাগর আলী (৩১) ওতার অন্যতম সহযোগী স্ত্রী ঈশিতা বেগম (২৫)।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, 

গ্রেফতারকৃতরা প্রথমে অর্থের লোভে ও পরবর্তীতে কাঙ্খিত   অর্থ না পেয়ে ক্ষোভে তাদেরকে হত্যা করে তারা। 

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব আরও জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারকৃত সাগর সাভার বারইপাড়া এলাকার একটা চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় ভিকটিম মোক্তারকে পার্শ্ববর্তী একটি কবিরাজি ও ভেষজ ঔষধের দোকানে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়ে চিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে। এসময় গ্রেফতারকৃত সাগর জানতে পারে ভিকটিম মোক্তার ঐ দোকানে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসা বাবদ ২০ হাজার টাকা খরচ করেও কোন ফলাফল পায়নি। গ্রেফতারকৃত সাগর কৌশলে ভিকটিম মোক্তারকে ডেকে নিয়ে আসে এবং ভিকটিমের সাথে কথাবার্তায় জানতে পারে যে, ভিকটিম মোক্তারের ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ ও আস্থা রয়েছে। ভিকটিম মোক্তার তার ও তার পরিবারের বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার কথাও গ্রেফতারকৃত সাগরকে জানায়। গ্রেফতারকৃত সাগর জানায় যে, তার স্ত্রী একজন ভালো কবিরাজ এবং সে তার সমস্যার সমাধান করে দিবে বলে আশ্বাস প্রদান করে। কথাবার্তার এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত সাগর উক্ত চিকিৎসার জন্য ভিকটিম মোক্তারের সাথে ৯০০০০/- (নব্বই হাজার) টাকার চুক্তি করে। গ্রেফতারকৃত সাগর ও তার স্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে ঔষধসহ তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করবে বলে জানায়। গ্রেফতারকৃত সাগরের সাথে যোগাযোগের জন্য ভিকটিম মোক্তার মোবাইল নাম্বার চাইলে গ্রেফতারকৃত সাগর তার আত্নীয়ের মোবাইল নাম্বার প্রদান করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সাগর বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীকে উক্ত বিষয়ে জানায় এবং তার স্ত্রী নগদ বিপুল অংকের টাকার কথা শুনে রাজি হয়। তারা পরিকল্পনা করে ভুক্তভোগী মোক্তারের বাসায় গিয়ে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার কথা বলে তার পরিবারের সবাইকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে তাদের অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করবে। উক্ত পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রেফতারকৃত সাগর গাজীপুরের মৌচাক এলাকার একটি ফার্মেসি থেকে ১ বক্স (৫০টি) ঘুমের ঔষধ ক্রয় করে। 

এসময় তিনি আরো জানান , পরবর্তীতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে গ্রেফতারকৃত সাগরের সাথে তার আত্নীয়ের মোবাইল ফোনে কথা বলে শর্ত মোতাবেক চিকিৎসার পরবর্তীতে ৯০,০০০ হাজার টাকা প্রদানের ব্যাপারে ভিকটিম মোক্তার আশ্বাস প্রদান করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে গ্রেফতারকৃত সাগর ও তার স্ত্রী গাজীপুরের মৌচাক থেকে ভিকটিম মোক্তারের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এবং জামগড়া মোড়ে ভিকটিম এর সাথে দেখা করে ভিকটিমের সাথে তার বাসায় যায়। 

ভুক্তভোগীর বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সাথে প্রাথমিক পরিচয়ের পর গ্রেফতারকৃত সাগরের স্ত্রী ঈশিতা তাদের সমস্যার কথা শুনেন এবং ভিকটিম মোক্তার তাদের আপ্যায়নের জন্য ভালো-মন্দ রান্না করেন। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সাগরের স্ত্রী ঈশিতা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী  ইসবগুলের শরবতের সাথে চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে তাদেরকে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার ঔষধ বলে খাওয়ায়। শরবত খাওয়ার পর ভিকটিম মোক্তার, তার স্ত্রী ও ছেলে ঘুমের ঔষধের প্রভাবে ঘুমিয়ে পড়লে গ্রেফতারকৃত সাগর ও তার স্ত্রী মিলে প্রথমে মোক্তারের কক্ষে গিয়ে মোক্তারের হাত ও পা বাধে, পরবর্তীতে মোক্তারের স্ত্রীর হাত-পা বাধে। পরবর্তীতে তারা ভিকটিম মোক্তারের মানিব্যাগ, তার স্ত্রীর পার্স ও বাসার অন্যান্য স্থানে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর জন্য তল্লাশি করে মাত্র ৫০০০ টাকা পায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রেফতাকৃতরা বটি দিয়ে প্রথমে ভিকটিম মোক্তারের গলায় উপর্যপুরি কোপ দিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে অন্য কক্ষে গিয়ে গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিমের ছেলে ও স্ত্রীকে একই বটি দিয়ে পর্যায়ক্রমে কুপিয়ে হত্যা করে। গ্রেফতারকৃতরা তাদের সকলের মৃত্যু নিশ্চিত করে ভিকটিম মোক্তারের হাতে থাকা আংটিটি নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা উভয়ে ভিন্নপথে রিকশাযোগে গাজীপুরের মৌচাকে তার শ্বশুরবাড়ি (ভাড়া বাসায়) আসে এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকে।

এ সময় র‍্যাব আরো জানায়, হত্যাকারী সাগর ২০২০ সালে দুইশত টাকার জন্য একই পরিবারের চারজনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। হে মামলায় হত্যাকারী সাগর র‍্যাব এর হাতে আটক হয়। পরবর্তীতে এই হত্যা মামলার চার্জশিট দেওয়া হয় এবং হত্যাকারী সাগর সেখানে চার্জশিট ভুক্ত আসামী হিসেবে প্রায় সাড়ে তিন বছর জেল খেটে ২০২৩ সালের জুন মাসে জামিনে বের হয়। জামিনে বের হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ-কর্ম কাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে জুলাই মাসে হত্যাকারী সাগর সিলেটের জাফলং দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যায়। সেখানে দীর্ঘ একমাস অবস্থান করে সে আগস্টে আবার বাংলাদেশ চলে আসেন। বাংলাদেশে এসে সে বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত হয়ে মাদকদ্রব্য সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছিল। র‍্যাব মিডিয়া সেন্টার এর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান। 

উল্লেখ্য যে,  গত শনিবার ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে আশুলিয়ার উত্তর গাজীরচট  ইউনিক ফকির বাড়ি মোড় এলাকার মেহেদী হাসানের ছয় তলা ভবনের  চারতলার ফ্ল্যাট  থেকে মা-বাবাসহ ছেলের মৃতদেহ  উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। 

এঘটনায় নিহত বাবুল হোসেনের ভাই আয়নাল হক বাদী হয়ে গত ১ অক্টোবর আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages